Saturday 24 April 2010

"তরল ভয়" নিয়ে দ্বীন মহম্মদ AKA সুমন রহমানের আর্টিকেলীয় মামদোবাজি

৬ এপ্রিল বাটপার সুমন রহমান, যাকে বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে সবাই দ্দীণূ নামে চিনে, একটি আর্টিকেল ফেঁদে বসে দৈনিক প্রথম আলোতে। প্রথম আলো আর সামহয়ারইনব্লগ ছাড়া অন্য কোথাও দ্দীণূ লিখে না, কারণ অন্য সবজায়গাতেই সে খানিকটা পুটকিমারার উপরে থাকে। প্রথম আলোতে তার খুঁটির জোর সাজ্জাদ শরীফ, যে সাজ্জাদ শরীফের হোগায় তেল ডলতে ডলতে দ্দীণূর দুই হাতের হস্তরেখা প্রায় বিলীন হয়ে এসেছে সময়ের সাথে। শোনা যায় উপসম্পাদক আনিসুল হকের সাথেও দ্দীণূর সুসম্পর্ক বিদ্যমান। আনিসুলে তার ছ্যাবলা গদ্যকার্টুন কলামে মাঝে কিছু সময় সুমন রহমানকে "তরুণ গল্পকার" আখ্যা দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতো। এখন তাদের প্লেটোনিক প্রেম কী পর্যায়ে, তা জানা যায় না। তবে বহুদিন হলো আনিসুল দ্দীণূর নাম আর নেয় না।

যা বলছিলাম, সাজ্জাদ শরীফের সাথে দ্দীণূর প্রচণ্ড তৈলাক্ত সম্পর্ক। সেই তেলের জোরে দ্দীণূ তার নিজের হোগায় কলম গুঁজে বালছাল যা আসে লিখে পাঠায় প্রথম আলোতে, সেগুলি কোনো সম্পাদনা ছাড়াই ছাপা হয়। কারণ ঐ পাতার কোনো সম্পাদকের বিচি এত শক্ত না যে সাজ্জাদ শরীফের কোনো হোগলা লেখা পাঠালে সেটাতে তারা কলম ধরবে। ফলাফল কী হয়, তা সচলায়তন ব্লগে এস এম মাহবুব মোর্শেদের একটা লিখা পড়লেই আপনারা বুঝতে পারবেন।

নিচের আর্টিকেলটা পড়েন। লালকালি দিয়ে দাগানো অংশটা মন দিয়ে পড়েন।


সহিংসতা
তরল ভয়ের স্বরলিপি

সুমন রহমান | তারিখ: ০৬-০৪-২০১০


আপনার মেয়ে পাড়ার বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়েছে। বখাটের দাবি, মেয়েকে তার হাতে তুলে দিতে হবে। আপনার আদরের মেয়ে, তিল তিল করে বড় করেছেন ওকে, আঁচড় লাগতে দেননি গায়ে, ওকে তুলে দিতে হবে সেই হাতে—যে হাতে ফুল কিংবা ভ্রমর নয়, বরং ইয়াবা, হেরোইন আর রিভলবার খেলা করে! আপনার মেয়ে, যার মুখে আধো আধো বোলের শব্দ এখনো আপনার কান থেকে মুছে যায়নি, যার ডায়াপার বদলে দিতে গিয়ে আপনার শেষরাতের ঘুম পাতলা হয়ে গেছে কত দিন, যাকে আঙুলে ধরে স্কুলে নিয়ে গেছেন এই সেদিনও, তাকে বউ সাজিয়ে হাসিমুখে তুলে দিতে হবে কালো এক মোটরসাইকেলের পেছনে! ঝরাপাতার মতো কাঁপছে আপনার মেয়ে শোবার ঘরের দরজার আড়ালে লুকিয়ে, আর বসার ঘরে ‘বরযাত্রী’ অপেক্ষমাণ মারণাস্ত্রসমেত, কী করবেন আপনি?

বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবক্ষয়, যেখানে জীবনের সামান্য নিরাপত্তাটুকু নেই, সে রকম একটি দেশের অসহায় বাবা-মা হিসেবে আপনারা তা-ই করলেন, যা ন্যূনতম বিবেচনাবোধ থেকে করা যেতে পারত। পুলিশ ডাকলেন না (কারণ ডেকে লাভ নেই), বরং ওই বখাটে যুগলের সঙ্গে কথা বললেন। বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে এটা কেন অসম্ভব। আলাপচারিতার একপর্যায়ে ওরা পিস্তল বের করে গুলি করল, লুটিয়ে পড়লেন আপনারা। আর আমরা পত্রিকায় পড়লাম এই হত্যাকাণ্ডের ইতিবৃত্ত। পড়লাম, মেয়েকে তুলে না দেওয়ার ‘অপরাধে’ বাবা-মা খুন হয়ে যাওয়ার ভয়ংকর কাহিনি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সমাজের অবক্ষয়, মাদকাসক্তি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে মিলিয়ে ব্যাখ্যা একটা দাঁড় করিয়ে তড়িঘড়ি দায়মুক্ত হয়ে গেলাম!

আর খুনিরা যখন ধরা পড়ল, আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম এরা কেউ মনস্টার নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছাত্র, মধ্যবিত্ত/উচ্চমধ্যবিত্ত পারিবারিক কাঠামোর মধ্যেই বড় হয়ে উঠেছে! এদের আশপাশের সবাই চেনে, তারা বাসে-রিকশায় চড়ে, ইন্টারনেট ব্রাউজ করে, ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। আমরা কেউ ভেবেই দেখলাম না, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? তাদের হাতে যখন পিস্তল, তারা তো মেয়েটিকে রাস্তা থেকেও অপহরণ করতে পারত, বাসা থেকেও পিস্তলের মুখে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু সেটা তারা করল না, এমনকি বাবা-মাকে খুন করার পরও বরং বলে গেল, ‘তোর বাবা-মাকে মেরে ফেললাম, এখন একলা একলা থাক!’ আপনার মেয়ে যদি আসা-যাওয়ার পথে অপহূত হয়ে যেত, কিংবা পিস্তলের মুখে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যেত ওরা, তাতে আপনার বিশ্বাস ও মূল্যবোধ অন্তত জিম্মি হতো না। কিন্তু এরা তা চায়নি। এরা চেয়েছিল, আপনি এদের বখাটে জেনেও হাসিমুখে কন্যা সম্প্রদান করেন! হূষ্টচিত্তে মোটরসাইকেলের পেছনে তুলে দেন আদরের মেয়েকে! সেই অর্থে, এরা শুধু আপনার মেয়েকে বলপূর্বক তুলে নিতে আসেনি; আপনার স্বাধীনতা, মূল্যবোধ আর বিশ্বাসকে ধর্ষণ করতেও এসেছিল। সেটা করতে দেননি বলেই খুন হতে হলো আপনাকে।

কড়াইল বস্তিতে একটি গান শুনতাম প্রায়ই: ‘কোনো অস্ত্রধারীর হাতে আমার বোনকে দেব তুলে/ সে সন্ত্রাসী হোক কিংবা ক্যাডার, কার কি যায় আসে?/ আমার বোনটি নিরাপত্তা পাবে থাকলে যে তার পাশে।’ মনির খানের সেই গানের শ্রোতা তো আপনি নন। এই গান বলছে শহরের সেই জনগোষ্ঠীর কথা, যারা বস্তিতে থাকে শহরের আবর্জনা হিসেবে, যাদের পক্ষে কোনো থানা-পুলিশ কোর্ট-কাচারি নেই, যারা ঘুমায় কিংবা জেগে থাকে আগুন আর বুলডোজারের দুঃস্বপ্নের মধ্যে প্রতিদিন। সেই বস্তিতে বড় হয়ে ওঠা একটি বোনের জন্য উদ্বিগ্ন ভাই এর চেয়ে বেশি কি নিরাপত্তা চাইতে পারে? কারণ, সে জানে তার হাত আইনের দরজা পর্যন্ত কোনো দিন পৌঁছাবে না। তো, আপনি কেন সেভাবে ভাববেন? সমাজে আপনার প্রতিষ্ঠা আছে, সাংগঠনিক পরিচয়ও আছে খানিকটা, ছেলেমেয়েরা দেশে-বিদেশে ভালো করছে, আপনি তো মনির খানের সেই গানের শ্রোতা হবেন না! আপনি আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন, ভোট দেন, কর দেন, এমনকি সমাজের ভালোমন্দ নিয়ে বন্ধুমহলে মতামতও দিয়ে থাকেন। এভাবে নিজের ক্ষমতায়ন সম্পর্কে আপনার একটি বায়বীয় ধারণা জন্মায়। আপনি ভাবেন যে সমাজের সার্বিক পচন থেকে আপনার বিত্ত, সক্রিয়তা, বিশ্বাস আর মূল্যবোধ আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। আর নিরাপত্তার যে ব্যূহ আপনি নিজের চারপাশে অনুভব করছিলেন, আপনি খুন হয়ে যাওয়ার পর আমরা বুঝলাম, এটা ছিল নেহাত কাচের দেয়াল!

খুন হওয়ার আগের মুহূর্তে যাই, যেখানে দেখব যে দুই বখাটে আপনার বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে আছে কোমরে রিভলবার গুঁজে, আপনার মেয়েটিকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়; বরং আপনারা হাসিমুখে মেয়েকে ‘সুপাত্রে’ সম্প্রদান করবেন, সেই আবদার নিয়ে! এবার অন্য পৃষ্ঠায় যাই, দেখব, আপনার মেয়ের দীর্ঘদিনের ‘বন্ধু’ তার অন্যত্র প্রেমের দেনা শোধ করতে গিয়ে ছুরি কিনছে আপনাকে রক্তাক্ত করে দেবে বলে। কারণ, তার ২০ লাখ টাকা লাগবে এবং সেই টাকা কোনো কার্যকারণ ছাড়াই আপনাকে দিতে হবে! মেয়ের এই বন্ধুটিকে নেহাত বখাটে ভাবার কোনো সুযোগ ছিল না আপনার, আপনি তো একে সুশীল ছাত্র এবং মেয়ের বন্ধু হিসেবেই চেনেন। এবার আরেক পৃষ্ঠায় যাই, যেখানে আপনার ছাত্রীর প্রেমিক আপনারই বাড়ির সামনে ছুরি নিয়ে অপেক্ষা করছে আপনাকে খুন করার জন্য। আপনার চোখের আড়ালে আপনার চেনা-পরিচিত মানুষজন কী ভয়ংকরভাবে বদলে যাচ্ছে, সে হিসাব আপনি কীভাবে রাখবেন? কিন্তু হিসাব না রাখতে পারলেও দায় আপনাকেই নিতে হবে! খড়্গ আপনার ওপরই ওঠানো, পচন যেখানেই থাকুক।

আপনার বেঘোরে খুন হয়ে যাওয়ার জন্য এসব অছিলাই যথেষ্ট। আপনি শুধু বেশুমার নৌ কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় পটল তুলবেন, লাগাতার ভূমিকম্পে থরহরিকম্প থাকবেন তা তো হবে না! আপনাকে শুধু ক্রসফায়ার, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বুলেট, ছিনতাইকারীর ছুরি বা অজ্ঞান পার্টির ধুতরার বিষ খুঁজে বেড়াচ্ছে ভাবলে ভুল হবে। আপনি খুন হতে পারেন নিজ মেয়ের বখাটে প্রণয়প্রার্থীর হাতে স্রেফ তার আবদার ফিরিয়ে দেওয়ার অপরাধে। আরও তুচ্ছ অজুহাতে আপনাকে খুন করতে পারে আপনার সন্তানের বহুদিনের চেনা কোনো বন্ধু কিংবা আপনার ছাত্রীর প্রেমিক কিংবা আপনাকে খুন করার জন্য বিদেশে বসেও খুনি ভাড়া করতে পারে কোনো অনলাইন ফ্যানাটিক

এখন নিশ্চয়ই হেসে উঠবেন আপনি। বলবেন, আরে দূর, এসব ঘটনা তো হরহামেশা ঘটে না, সরলীকরণ করছ তুমি! ঠিক। এসব ঘটনা কালেভদ্রেই ঘটে। তাই বলে কি এর ভয় থেকে আপনি মুক্ত থাকতে পারছেন? জমাটবাঁধা ভয় হয়তো আপনার দম বন্ধ করে দিচ্ছে না, আপনি দিব্যি খাচ্ছেন-দাচ্ছেন, ঘুরেও বেড়াচ্ছেন। কিন্তু শিরার ভেতর, রক্তপ্রবাহের সঙ্গে অবয়বহীন তরল একটা ভয় ঠিকই বয়ে চলেছে। এই ‘তারল্য’ পাতলা অর্থে মোটেও নয়, বরং এর অবয়বহীনতা একে সর্বগামী করে তুলছে, যেন সর্বভূতে বিরাজিত সে! কিন্তু এই ভয়কে বহন করে বেঁচে থাকার সামর্থ্য আপনাকে দিচ্ছে আমাদের ‘তরল আধুনিক’ সমাজব্যবস্থা, সমাজতাত্ত্বিক জিগম্যান্ট বম্যান যেমন বলেন। আপনি পালিয়ে যাবেন না, আতঙ্কে চিৎকার করে উঠবেন না, ঘরে খিল লাগিয়ে কাঁপতে থাকবেন না, কিন্তু অবশ্যম্ভাবী ভয়ের স্রোত আপনাকে একটু একটু করে গিলে ফেলবে। নীরবে টহল দিয়ে বেড়াবে আপনার শিরায়-উপশিরায়। এভাবে ভেতরে ভেতরে আপনি অন্য মানুষ হয়ে উঠবেন ধীরে ধীরে।

বম্যান তিন ধরনের ভয়ের কথা বলছেন তাঁর লিকুইড ফিয়ার (২০০৬) নামক বইতে। কিছু ভয় আছে আদিম বা প্রাকৃতিক। এর প্রতিক্রিয়ায় মানুষ আর জানোয়ারের পার্থক্য বিশেষ নেই: পারলে রুখে দেওয়া, নয়তো পালানো। কিছু ‘ডেরাইভেটিভ’ অর্থাৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিক: যেমন চাকরি হারানোর ভয়, স্ট্যাটাস নেমে যাওয়ার ভয়। আর কিছু ভয় আছে, যা পুরো প্রাকৃতিকও নয়, আবার পুরো সাংস্কৃতিকও নয়। এদের কোনো নাম নেই, এরা থাকে মাঝখানে ধূসর এলাকায়। এরা প্রাকৃতিক হলেও পুরোপুরি নয়, আবার মানবসৃষ্ট হলেও পুরোপুরি নয়। এই জোনে আপনার বিবেক-বুদ্ধির বিশেষ ভূমিকা নেই, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রও এখানে কখনো বধির কখনো বা অকেজো, নৈতিকতা কিংবা কোনো রামসুন্দর বসাকের আদর্শ দিয়ে এর সামান্যই মোকাবিলা করা সম্ভব। একেই ‘তরল ভয়’ নাম দিচ্ছেন বম্যান। আপনি ভ্রমণ করছেন ট্রেনে, বোমা হামলা হতে পারে; শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন, স্টক এক্সচেঞ্জে ধস নামতে পারে; ঘুমিয়ে পড়েছেন, ভূমিকম্পে চিরকালের মতো আটকে যেতে পারেন বিধ্বস্ত ভবনের ভেতর; মেয়ে বড় হয়েছে, তার প্রণয়প্রার্থীর হাতে খুন হয়ে যেতে পারেন; ছেলে স্কুলে গেছে, অপহূত হতে পারে; পাড়ার বখাটেদের উৎপাতে মেয়ে বিষ খেয়ে মরে যেতে পারে; স্কুটারে বাড়ি ফিরছেন, চোখে মলম লাগিয়ে আপনাকে ট্রাকের নিচে ফেলে দেওয়া হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ভয় তরল, শ্রেণী-লিঙ্গ-বর্ণভেদে আগের মতো জমাট বাঁধছে না। নাগরিক মধ্যবিত্ত, দেখুন না আপনার সম্ভাব্য খুনি শুধু নিম্নবর্গ থেকেই আসছে না, সে বেড়ে উঠছে আপনারই ড্রয়িংরুমে। তাকে আপনি চেনেন, রাস্তায় সালাম নিয়েছেন বহুবার, পালা-পার্বণে হয়তো বাড়িতে ডেকে খাইয়েছেনও। তাকে এখন আর শ্রেণী দিয়ে, বর্ণ দিয়ে, ধর্ম দিয়ে আলাদা করে চেনা যাচ্ছে না, যাবেও না।

তো, আপনি যখন আপনার মেয়ের প্রণয়প্রার্থীর গুলিতে খুন হয়ে যাবেন, তাকে আমরা কী নাম দেব? সমাজের অবক্ষয় বা সহিংসতার বিস্তার যা-ই বলি, হাতের মুঠোয় যেন পুরোটা আসে না। যতই আমরা বিস্মিত না হওয়ার ভান করি, যতই হাজির করি রেডিমেড ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, এই খুন যেন সেসবের ঊর্ধ্বে উঠে থাকে! ‘সহিংসতা’ কিংবা ‘অবক্ষয়’-জাতীয় শব্দগুলোকেই খুব ক্লিশিত লাগে, এদের সংজ্ঞাগুলো যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে! এই যে ভয়াবহ গতিশীলতা, যার জন্য অশুভ কোনো নাম আমরা ঠিক করতে পারছি না। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে দিনে দিনে আরও অক্ষম হয়ে উঠছে আমাদের রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা, বিবেচনা, মূল্যবোধ ও শুভবুদ্ধি। ফলে ভয় অবয়ব হারাচ্ছে আরও, পরিপুষ্ট হয়ে উঠছে আমাদের তরল ভয়ের স্বরলিপি!

সুমন রহমান: কবি, কথাসাহিত্যিক।
sumanrahman@hotmail.com


লালকালি দিয়ে দাগানো অংশটা পড়লে বুঝতে পারবেন, সুমন রহমান ওরফে দ্দীণূ কতবড় বাটপার। অনলাইনের উপর তার রাগ, কারণ অনলাইনে সে চরম চোদা খেয়ে এসেছে প্রায় প্রতিটা ব্লগে। সচলায়তন থেকে তাকে পুটকিতে লাত্থি মেরে বের করে দেয়া হয়েছিল, সামহয়ারইনব্লগে সে রীতিমতো দৌড়ের উপর ছিল, আমারব্লগে "মোশতাক" নিকে গালাগালি করতে গিয়ে একটা দারুণ পুটকিমারা খেয়েছিলো, আর আরো নতুন ব্লগগুলিতে গিয়ে সে মজা পায় নাই। সামহয়ারইনব্লগের মালিক আরিল আর জানার সাথে তার চুক্তি হয়েছে, সে ঐখানে তাদের প্রটেকশনে লিখবে। আশীফ এন্তাজ রবি, রাশেদুল হাফিজ রাহা, কৌশিক আহমেদ, অন্যমনস্ক শরৎ, একরামুল হক শামীম, সিমু নাসের, হাসান বিপুল প্রভৃতি ব্লগারদের নিয়ে একটি মোর্চা সামহয়ারইনব্লগে আছে, সেই মোর্চায় এখন সেও ঢুকেছে। কখনো ফিউশন ফাইভ, কখনো মুনশিয়ানা, কখনো সেনিন শাহ নিকে সুমন রহমান দ্দীণূ এখন নিজের পুটকি নিজেই ছদ্মবেশে চুলকাচ্ছে তো চুলকাচ্ছেই।

অনলাইনে ঠাপ খাওয়া এই লোক কিন্তু খোদ তার পোঁদগুরু সাজ্জাদ শরীফ শাসিত প্রথম আলোতেই পাল্টা ঠাপের মুখে পড়েছে। বলিষ্ঠ সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ কিন্তু তাকে ছাড়েন নাই, প্রথম আলোতেই ভদ্র ভাষায় উল্টা দ্দীণূর পুটকি মেরে দিয়েছেন। পড়েন।



প্রতিক্রিয়া
সহিংসতার ভয়টি ‘তরল’ নয়, জমাট

ফারুক ওয়াসিফ | তারিখ: ০৯-০৪-২০১০


২০০ বছর আগের কথা। পিয়েরে রিভিয়েরে নামের এক ফরাসি তরুণ তার মা, ভাই ও বোনকে খুন করে। ঘটনাটা এত দূর আলোড়ন তোলে যে খুনির মন বুঝতে তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। সে সময়ের প্যারিসের বাঘা বাঘা মনোরোগ বিশেষজ্ঞও ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে থাকেন। অপরাধের পেছনে তাঁরা সমাজ ও সংস্কৃতির সম্পর্কটা খুঁজতে নামেন।
খুন-খারাবি তো দুনিয়ায় নতুন নয়। কিন্তু পিয়েরে রিভিয়েরের বেলায় নতুন হলো এ নিয়ে গবেষণা। কেবল তাকে শাস্তি দেওয়ার মামলা হলে সেটা পুলিশের জিম্মায় অনায়াসেই সারা যেত। কিন্তু ফরাসি কর্তৃপক্ষ বুঝতে চেয়েছিল, কোন অবস্থায় দেশে অপরাধ ও নৈরাজ্য বেড়ে যায়? তারা জানত কেবল শাস্তিতে সব অপরাধের প্রতিকার হয় না। হাতটা দিতে হয় গোড়ায়। সেটা পুলিশের কাজ নয়, সাংবাদিকেরও নয়। কাজটা গবেষকের, রাজনীতিবিদের, সমাজের বিবেকের; সবার। কিন্তু বাংলাদেশে সংবাদপত্রে প্রকাশিত অপরাধের রোজনামচা আর পুলিশের চার্জশিটের মাধ্যমেই প্রতিকারের দায় সারা হয়ে যায়। আমরা যে তিমিরে ছিলাম, সেই তিমিরেই থাকি।

বহুদিন থেকে বাংলাদেশে নিম্নমাত্রার, কিন্তু মোটামুটি স্থায়ী এক নৈরাজ্য চলছে। কোনো কিছুই ঠিকমতো চলছে না, অথচ পড়পড় করেও ভেঙে পড়ছে না ঠিক। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ, কিছুটা আইন, কিছুটা সামাজিকতা আছে। নইলে শাসন ও জীবন কিছুই তো চলবে না। এর মধ্যেই সমগ্র সামাজিক-রাজনৈতিক বয়নটিই উত্তেজনা ও অসহিষ্ণুতায় কাঁপছে। তুচ্ছ ঘটনা জন্ম দিচ্ছে অতিকায় হিংসার, একই সঙ্গে ঝরছে রক্ত ও অশ্রু। একদিকে কিছু মানুষের খোলস খসে গিয়ে, বদলে গিয়ে নির্যাতক হয়ে উঠছে, অন্যদিকে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একেকটি ঘটনার পর আমরা পাচ্ছি এক নতুন খুনি-ধর্ষক-নির্যাতক, অন্যদিকে পড়ে থাকে মানবতার নির্যাতিত ও নিহত দেহটি। মনে রাখতে হবে, দুজনই কিন্তু সমাজেরই সদস্য।

এই সহিংসতা ও অসন্তোষ বিদ্যমান ব্যবস্থারও খেসারত। রাজনীতি ও অর্থনীতির জগতে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ব্যক্তির মনকেও উত্তপ্ত ও সহিংস করে তুলতে পারে। প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি কিংবা ভোটাভুটির গণতন্ত্র যতই জমে উঠুক; মানুষ ও প্রকৃতি দিন দিন আরও বিপর্যস্ত ও অসহায় হচ্ছে। পানি দূষিত হলে যেমন সবকিছুর মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়, তেমনি সামাজিক পরিমণ্ডলের দূষণও বিষিয়ে তোলে আমাদের জীবনকে। সম্প্রতি দুই পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত দ্য স্পিরিট লেভেল গ্রন্থে দুই গবেষক রিচার্ড উইলকিংসন ও কেট পিকেট দেখিয়েছেন, কম বৈষম্যের সমাজে জীবন সর্বদাই শান্তিময়হয়।
জীবনের নৈরাজ্য মনকেও অস্থির করে, স্নায়ুতে চাপ বাড়ায়। মানুষ এর মধ্যে একা হয়ে যায়। কঠিন বাস্তবতায় কঠিন হয়ে যায় সেই একা মানুষদের মন। সম্পর্ক ক্ষয়ে যায়, পরস্পরের প্রতি দায় ও চক্ষুলজ্জাও ততই কমে।

গ্রাম কি শহর—সবখানেই আগেকার সমাজ আর নেই। বস্তির অমানবিক পরিবেশ কিংবা অভিজাত এলাকার দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন কিংবা মধ্যবিত্তদের ঘিঞ্জি বসতিতে সমাজ টেকে না; থাকে না সামাজিকতা। অথচ প্রতিবেশীদের মুখ না দেখলেও বাজারের দোকানির সঙ্গে কিংবা কর্মস্থলের প্রতিযোগীদের সঙ্গে নিত্য দেখা হয়। বাজার যতই জাগ্রত হয় সমাজ হয় ততই নিস্তেজ। এই নিস্তেজ সমাজের নিস্তেজ মানুষকে তখন সহজেই উত্তেজিত করে তেলে মোহ ও মোহভঙ্গের ঘটনা। পুরোনো নৈতিকতার অনুশাসন আলগা হতে থাকে। পারস্পরিক অসম্মান আর অসহিষ্ণুতার বিস্তারও বাড়ে। চলতে থাকে দুর্বলের ওপর সবলের ইচ্ছা ও বাসনার বিজয়। সবাই এর শিকার হলেও বিশেষত নারী তথা অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর বিপন্নতা বাড়ে। সব কটি নারী নির্যাতন ও খুনের ঘটনায় সেই চিহ্নই ভাসে।
আইনকানুন, নিয়মনীতি যারা মানে না, তাদের কাছে বলপ্রয়োগই হলো প্রেম ও প্রতিপত্তি অর্জনের উপায়। বাংলাদেশে এখন আইন আর ক্ষমতার একমাত্র প্রতিনিধি নয়; আরও অনেক ক্ষমতা আছে। আইনি ক্ষমতা সীমিত হলেও বেআইনি ক্ষমতা হয় সীমাহীন। নৈরাজ্যের আবহে বেআইনি ক্ষমতার ধারক-বাহকেরা তখন সিস্টেমের ইঞ্জিন হয়ে বসে। ক্ষমতা চায় আনুগত্য, চায় মানুষ ও সম্পদ নিয়ে লীলাখেলার স্বাধীনতা। এটা প্লাবনের মতো ছড়ালে ক্ষমতাহীন গরিব ও ছন্নছাড়া বেকারদের কেউ কেউ তাদের সঙ্গে শামিল হয়, অধিকারের বদলে অনুগ্রহধন্য হয়ে তারাও চায় ক্ষমতার ঝোলের স্বাদ। ক্ষমতাবানদের আশ্রয়ে এভাবে তারাও পরিণত হয় ‘ঘরোয়া শত্রুতে’। আজকে ঘরে-বাইরে মেয়েদের ওপর চড়াও হওয়া ‘বীরপুঙ্গবরা’ এমনই ঘরোয়া শত্রু হিসেবে হাজির হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়ের সংস্কৃতি। কারণ সরকার-প্রশাসন শিথিল, সমাজ প্রতিরোধহীন।

৬ এপ্রিলের প্রথম আলোর এক নিবন্ধে মোটামুটি এমন পরিস্থিতিকেই ‘তরল ভয়’-এর শিরোপা দিয়েছেন লেখক সুমন রহমান। এই ভয়ের সংস্কৃতি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘কিছু ভয় আছে, যা পুরো প্রাকৃতিকও নয়, আবার পুরো সাংস্কৃতিকও নয়। এদের কোনো নাম নেই, এরা থাকে মাঝখানে ধূসর এলাকায়। এরা প্রাকৃতিক হলেও পুরোপুরি নয়, আবার মানবসৃষ্ট হলেও পুরোপুরি নয়। এই জোনে আপনার বিবেকবুদ্ধির বিশেষ ভূমিকা নেই, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রও এখানে কখনো বধির কখনো বা অকেজো...।’ এই বিশ্লেষণ থেকে মনে হতে পারে, সমাজ-রাষ্ট্রের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা নয়, নিরাপত্তা ও অধিকারের অভাব নয় এই ভয়ের কারণ কোনো গায়েবি উৎস। আর ‘অকেজো’ বলে সমাজ ও রাষ্ট্রও পেল ছাড়। তিনি বলছেন, ‘শ্রেণী-লিঙ্গ-বর্ণভেদে আগের মতো জমাট বাঁধছে না।’ অথচ সরকারসহ উচ্চ শ্রেণীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির প্রশ্রয় ছাড়া কি এই সহিংসতা চলতে পারত? এই বিশৃঙ্খলার প্রধান সুফলভোগী কি তারাই নয়? আর নিম্ন ও মধ্যবিত্তই কি নয় এর প্রধান শিকার? এখানে আমরা আক্রান্ত হচ্ছি পুরুষালি-সন্ত্রাস তার ভাই-বেরাদর দখল-দুর্নীতি ইত্যাদির হাতে। এই ঘটনা ধরা যাক, ডেনমার্কে কিংবা ওমানে এভাবে ঘটছে না। এর নির্দিষ্ট দেশীয় ও সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক চেহারা আছে। ক্রসফায়ার কোনো গায়েবি সন্ত্রাস নয়। কিন্তু এসব তাঁর নজর এড়াল, ডন কুইকজোটীয় কায়দায় কাল্পনিক শত্রুর বিরুদ্ধে চালালেন অধিবিদ্যার তরোয়াল।

দৃশ্যমান কারণগুলো এড়িয়ে অজানা সমস্যায় পীড়িত হওয়া হাওয়ার ওপর তাওয়া ভাজা সমান কথা। সহিংস বাস্তবতাকে তারল্যে ভাসাতে গিয়ে তাঁকে একে একে ইতিহাস, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, রাজনীতি মায় পুরো বাস্তব জগত্টাকেই হিসাব থেকে বাদ দিতে হলো। এই হলো তাঁর ভয়ের অধিবিদ্যা।
সমস্যার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে কূলকিনারা হারানো কেউ এভাবে ভাবতে পারে। সাবেক কালের রোগ-ব্যাধি, বালা-মুসিবত, দুর্ভাগ্যসহ নানান উদ্বেগে জর্জরিত নিয়তিবাদী মানুষ যেমনটা ভাবত। হলিউডি ভুতুড়ে ও থ্রিলার ছবির জগতেও স্নায়ু হিম করা ভয়ের কায়কারবার দেখা যায়। কিন্তু জীবনের সত্যিকার বিপদ নয় বরং ভিনগ্রহের প্রাণী, ভাইরাস, ডাইনোসর, তেলাপোকা, মুসলিম জঙ্গি কিংবা যেকোনো প্রাকৃতিক শক্তি মায় কবর থেকে ওঠা পিশাচসহ নানান বানোয়াট ভীতির জমজমাট রাজত্ব সেখানে। ছোটদের মতো বড়রাও আসক্ত হয়ে উঠতে পারে এসব রূপকথায়; কিন্তু তা পরিস্থিতি বদলের পথ দেখায় না। এভাবে বাস্তব দুনিয়ার বাস্তব অপশক্তিগুলোর দাবড়ানি ভুলে থাকতে পারলে মনের সাময়িক আরাম হয় বটে, কিন্তু জীবনের অশান্তি তাতে শান্ত হয় না। বরং ভয়ের কার্যকারণ আড়াল করে সমাজসচেতনতার চোখে ঠুলি পরায়।

কিন্তু বাংলাদেশে এ রকম কোনো অজানা ও রহস্যময় সমস্যায় আমরা ভুগছি না। আমাদের সমস্যা বাস্তব ও জমাট নৈরাজ্য, ‘তরল ভয়’ নয়। এর বিরুদ্ধে জমাট ও তীব্র সরিষাবাড়ীর বালিকা বিদ্যালয়গুলোর ছাত্রীদের প্রতিবাদ (৬ এপ্রিল, প্রথম আলো)। এ ধরনের ‘অপ্রাপ্তবয়স্করাই’ সরব হয়ে সময়ের আর্তনাদ সবার কানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। নৈরাজ্যের শিকার তারাই বেশি। আজ তাদের ডাকে সাড়া দিতে না পারলেএকদিন নৈরাজ্যই রাজ্যহয়েযাবে।

ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক।
farukwasif@yahoo.com


এরকম পাল্টা চোদা খেয়ে দ্দীণূ তার পোঁদমাস্টার সাজ্জাদ শরীফের কাছে আরেকটি আর্টিকেল পাঠায়



প্রতিক্রিয়া
সহিংসতার কারণ ও অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা

সুমন রহমান | তারিখ: ১৮-০৪-২০১০

সম্প্রতি গুলশানে ঘটে যাওয়া জোড়া হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল প্রথম আলোতে আমি একটি লেখা দিই ‘তরল ভয়ের স্বরলিপি’ শিরোনামে। সেখানে এই হত্যাকাণ্ডটিকে কেন্দ্র করে নগর-মধ্যবিত্তের নিরাপত্তার বোধটি কীভাবে চিড় খাচ্ছে, সে বিষয়টি তুলে ধরি। সহিংসতার যে একটা শ্রেণীগত ধারণা মধ্যবিত্তের মাঝে কাজ করে (অর্থাৎ কেবল ছোটলোকেরাই সহিংস, আর ভদ্রলোকেরা ভদ্রলোকদের সংস্পর্শে নিরাপদ থাকবে এই ধারণা) সেটাকেও এই ঘটনার দৃষ্টান্ত দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করি। আরও বলি, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং ইভ টিজিংয়ের ধারাবাহিকতায় গুলশানে জোড়াখুন হলেও সেটি অন্য একটি মাত্রা পেয়ে যায়, যখন আমরা দেখি, কন্যার বিয়েতে পিতা-মাতা গররাজি হওয়ায় তাঁরা খুন হলেন, কিন্তু কন্যাটি অপহূত হলো না বা অন্য কোনো রকম সহিংসতার সরাসরি শিকার হলো না। সহিংসতার অনুমিত যে ফর্মুলা, তাতে দ্বিতীয়টাই হওয়ার কথা। এভাবে নগরে কি সমাজে বিদ্যমান যে ভয়ের সংস্কৃতি, সেটা আমাদের অনুমিত পথে যে সবসময় চলছে না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা হাজির করি একে ‘তরল ভয়’ আখ্যা দিয়ে।

এই ভাবনাটি নিয়ে ওয়েবে প্রচুর আলোড়ন হয়েছে গত কয়েক দিনে, এবং সর্বশেষ চোখে পড়েছে ফারুক ওয়াসিফের ৯ এপ্রিলে প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া প্রতিক্রিয়া। এই সুযোগে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এই লেখাটি নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে তাঁদের মূল্যবান আলোচনার জন্য। আলাপে আলাপে ভয় কেটে যায় নিশ্চয়ই! যাক, যে সহিংসতার ওপর ভিত্তি করে আলোচনার সূত্রপাত, তাকে বোঝার জন্য ফারুক ওয়াসিফ ‘গোড়ায় হাত’ দিয়েছেন এবং জানাচ্ছেন, এই সহিংসতা ‘বিদ্যমান ব্যবস্থারও খেসারত’। গোড়ায় হাত দিয়ে তিনি যা পেলেন তাকে তিনি এভাবে লিখছেন, ‘পানি দূষিত হলে যেমন সবকিছুর মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়, তেমনি সামাজিক পরিমণ্ডলের দূষণও বিষিয়ে তোলে আমাদের জীবনকে।’ অর্থাৎ সমাজটি যেহেতু সার্বিকভাবেই পচে গেছে; যেহেতু ‘সরকার-প্রশাসন শিথিল এবং সমাজ প্রতিরোধহীন’, এখানে এসব সহিংসতা ঘটবেই। তাঁর মতে, বিষয়টিকে সেই জায়গা থেকে না দেখে আমি ‘হাওয়ার ওপর তাওয়া’ ভেজেছি!

গুলশানের জোড়াখুন কোথায় আমাদের অনুমিত শঙ্কার পথ ছেড়ে অন্য পথে গেছে, সেটা আমি আমার লেখায় ইঙ্গিত দিয়েছি। এখন কেউ যদি মনে করেন, সমাজে খুনোখুনি নতুন কিছু নয়, সেটা তার দায়। যেহেতু পানিটাই দূষিত হয়ে গেছে, সেটা বদলে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়! আজকাল ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি চোখ বুজে একটা অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দেন। রোগীর শরীরের ভেতরে কোথায় কী ঘটছে, এত সব শোনার সময় তাঁর নেই, তাঁর আছে অ্যান্টিবায়োটিক, যেখানে যা-ই ঘটুক, কড়া ডোজ পড়লে ঠিক হয়ে যাবে! ফারুক ওয়াসিফের ফর্মুলাটি এ রকমই শোনাল।

আলোচ্য ঘটনাটি দেখুন: মেয়েকে চাইতে এসে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মেয়ের বাবা-মাকে খুন করে রেখে গেছে পাণিপ্রার্থী যুবক। নারীর প্রতি সহিংসতার জায়গা থেকে ঘটনাটিকে কীভাবে পাঠ করব আমি? তুলনার জন্য একটা দৃষ্টান্ত দিই: যুদ্ধের সময় ধর্ষণ একটা যুদ্ধকালীন কৌশল হিসেবে কাজ করে, যা দিয়ে শত্রুকে নৈতিক এবং মানসিকভাবে হীনবল করে তোলা হয়। এখানে নারীর প্রতি সহিংসতাকে যুদ্ধে জেতার উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গুলশানের ঘটনায়ও নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটেছে, সন্দেহ নেই। তবে সেখানে হত্যাকাণ্ডটিই বরং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রকাশের উপায় হিসেবে কাজ করেছে। দুটো ঘটনার সূক্ষ্ম তারতম্য খেয়াল না করলে লেজেগোবরে করে ফেলার আশঙ্কা আছে। দুটোই নারীর প্রতি সহিংসতা, কিন্তু এক জায়গায় সেটি উদ্দেশ্য এবং অন্য জায়গায় সেটি উপায়।

অবশ্য সমাজটাকে বদলে ফেললে এসব সূক্ষ্ম তারতম্যগুলো আমলে না নিলেও চলে। সে সমাজ-বিপ্লবীর ভাবনা, সমাজ-ভাবুকের নয়। আর তা ছাড়া সমাজটাকে তো বদলানো যাচ্ছে না। বরং সমাজ নিজে নিজেই এক ভয়ংকর পথে রওনা দিয়েছে। সে পথের খুঁটিনাটিগুলো খেয়াল করাকে আমি দায়িত্ব মনে করি। বলেছিলাম, এ রকম ঘটনা থেকে মধ্যবিত্ত সমাজে যে ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে তা শ্রেণী-লিঙ্গ-বর্ণনির্বিশেষে আগের মতো জমাট বাঁধছে না। এ এক তরল ভয়, তারল্যের কারণেই সে সর্বগামী হয়ে উঠছে। এটা নিয়তিবাদ নয় কিংবা আধিবিদ্যক চিন্তা নয়। আমাদের চিন্তাপদ্ধতির পশ্চাৎপদতার কারণে এসব ঘটনার সূক্ষ্ম মাত্রাগুলো আমরা ধরতে পারি না। এখানেই ফারুক ওয়াসিফের সঙ্গে আমার পদ্ধতির পার্থক্য। তিনি অবরোহী, আমি আরোহী। তিনি জানেন ‘কী করিতে হইবে’ এবং সেই বোধকে সঙ্গে নিয়ে সমাজে কী ঘটেছে, সেটা জানতে চান। তাঁর গন্তব্যের বোধটি জমাট থাকার কারণেই হয়তো তিনি সহিংসতার ভয়কে জমাট ভাবার দায় বোধ করছেন। আর আমি প্রতিদিনের জীবন থেকে ভয়ের চেহারাটি আঁকতে চেষ্টা করেছি, চিরদিনের থিওরি থেকে নয়। ফেসবুক নোটে ফারুক আলোচ্য ঘটনাটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পুরুষালি-সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, কালচার ইন্ডাস্ট্রি, বিশ্বায়ন আর প্রযুক্তির কল্যাণে ঘটমান নীরব যৌনবিপ্লবকে এর কারণরূপে দাঁড় করাতে চেয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর ভাষায়, এসব জিনিসকে ঘিরেই জোড়াখুন-সংক্রান্ত ভয়টুকু জমাট বাঁধছে। কিন্তু সে রকম হলে ‘যৌনবিপ্লব’-এর তীর্থভূমি পশ্চিমা দেশে এ রকম ঘটনা হরহামেশা ঘটত। সেটা যে ঘটছে না, তা ফারুক নিজেই স্বীকার করছেন। স্বীকার করে আবার দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন দেশীয় সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতের ওপর। চাঁদমারি এত ঢাউস করে বানালে তীর সেখানে না-আটকে যাবে কোথায়?

সমাজকে ব্যাখ্যার জন্য চিন্তাকাঠামো লাগে। চিন্তাকাঠামো কোনো অনড় জিনিস নয়, তাকে পরিবর্তিত বাস্তবতায় নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখা জরুরি। এই তো কয়েক দশক আগ পর্যন্ত সমাজচিন্তকেরা শ্রেণীর ধারণাটিকে সম্বল করে সামাজিক বৈষম্যকে ব্যাখ্যা করে এসেছেন। তারপর সত্তরের দশকের দিকে আমরা উপলব্ধি করতে শুরু করলাম, শ্রেণীধারণা সব ধরনের বৈষম্যকে ব্যাখ্যা করতে পারছে না এবং এর ধারাবাহিকতায় লিঙ্গীয় এবং বর্ণবৈষম্যের ধারণাগুলোকে যুক্ত করলাম শ্রেণীবৈষম্যের ধারণার সঙ্গে। চিন্তাকাঠামোর অন্ধ অনুসরণও যান্ত্রিকতা এনে দেয় ব্যাখ্যায়। ফলে আমরা যে নিক্তি দিয়ে সমাজ মাপি, তার পাল্লা-বাটখারা নিয়মিত যাচাই করে দেখার দরকার আছে। আমার মতে, প্রতিদিনের জীবনে ঘটতে থাকা সূক্ষ্ম ফারাকগুলো শনাক্ত করে রাখার মাধ্যমেই সেটা সম্ভব।
সুমন রহমান: কবি, কথাসাহিত্যিক।
sumanrahman@hotmail.com


দুই দিনের যোগী দ্দীণূ ভাতকে যখন অন্ন বলে, তখন বোঝা যায় ডাল মে কুছ কালা হায়। নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে যেই দ্দীণূ এত বড় বড় কথা বলা চুদাচ্ছে, একটু দেখেন, নিজের আরেক নিক মুনশিয়ানা দিয়ে সামহয়ারইনব্লগে সে কী পোস্ট লিখেছে। সেখানে সে নিজ নিকেও কমেন্ট চুদেছে, সেই কমেন্টটিও পড়েন। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে সে ব্লগস্ফিয়ারে নবাগতা এক ভদ্রমহিলা সম্পর্কে কীভাবে বিষোদগার করেছে, একটু দেখেন। এখানে খেয়াল করতে হবে, মুনশিয়ানা, সেনিন শাহ এগুলোও তারই নিক। সামহয়ারে একাধিক নিক নিয়ে ব্লগসন্ত্রাসের পথিকৃত এই সুমন রহমান। আবার সেই গিয়ে প্রথম আলোতে জ্ঞানী জ্ঞানী বাক্য চুদায়।

যাই হোক, ফারুক ওয়াসিফ দ্দীণূর অশালীন প্রতিক্রিয়ার সংযত উত্তর দিয়েছেন পুনরায় প্রথম আলোতেই


প্রতিক্রিয়া
সন্ত্রাসের মারেফতি তত্ত্ব: চোখের আড়ে লুকাল পাহাড়

ফারুক ওয়াসিফ | তারিখ: ২৪-০৪-২০১০

জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে এবং দুঃখের প্রতিকার সম্ভব—বলেছিলেন গৌতম বুদ্ধ। এই গভীর কিন্তু সরল কথাটি তিন আর্যসত্য হিসেবে পরিচিত। সন্ত্রাস-সহিংসতা আজ আমাদের দুঃখ দিচ্ছে। মনে ভয়ও জন্মাচ্ছে, আমি বা আমার সন্তান কিংবা পয়পরিজন কি নিরাপদ? এত ভয় আর এত দুঃখ যেখানে, সেখানে প্রতিকার হচ্ছে না কেন? কেন বন্ধ হচ্ছে না খুন-ধর্ষণ-নির্যাতন? কারণ, বুদ্ধকথিত সেই ‘দুঃখের কারণ’ যারা, তাদের হাতেই যে প্রতিকারের দায়িত্ব! সেই নেতা-রাজনীতিবিদ-প্রশাসক যাঁরা সন্ত্রাস দমনের সিদ্ধান্ত দেবেন, কিংবা সেই পুলিশ-আইন-আদালত, যাঁরা অপরাধীদের বিচার করবেন, তাঁরা বসে আছেন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে। নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে তাঁরা সন্ত্রাস-সহিংসতার কেষ্টু-বিষ্টুদের সামনে বর্ম হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

মানুষ এখন সন্ত্রাসের ভয়ে ভীত, প্রতিকার না হওয়ার ভয়ে ভীত, নিরাপত্তা হারানোর ঝুঁকিতে ভীত। এর জন্য তাঁরা ভাগ্য বা কোনো গায়েবি শক্তিকে নয়, সরকার-প্রশাসনকেই দোষ দেন। এই সত্য সবাই জানে, কিন্তু মনে হয় সুমন রহমান জানেন না। তাই তিনি তাঁর ‘তরল ভয়ের স্বরলিপি’ (প্রথম আলো, ৬ এপ্রিল) লেখায় বলেন, সন্ত্রাসীকে ‘এখন আর শ্রেণী দিয়ে, বর্ণ দিয়ে, ধর্ম দিয়ে আলাদা করে চেনা যাবে না...কিছু ভয় আছে, যা পুরো প্রাকৃতিকও নয়, আবার পুরো সাংস্কৃতিকও নয়। এদের কোনো নাম নেই, এরা থাকে মাঝখানে ধূসর এলাকায়। ...এই জোনে আপনার বিবেক-বুদ্ধির বিশেষ ভূমিকা নেই, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রও এখানে কখনো বধির কখনো বা অকেজো।’ এই বিশ্লেষণ থেকে মনে হতে পারে, সমাজ-রাষ্ট্রের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা নয়, রাজনীতিতে পেশিশক্তির দাপট নয়, দুর্নীতি ও দখলের লাঠিয়াল সন্ত্রাসীদের আধিপত্য নয়, ভয়ের কারণ কোনো রহস্যময় গায়েবি শক্তি।

কথায় বলে, ছাগল নড়ে খুঁটির জোরে। গরিব কি বড়লোক, যে পরিবার থেকেই সন্ত্রাসী আসুক, বড় দু-তিনটি দলের কারও না কারও খুঁটির জোর তার লাগবেই। লাগবে পুলিশের অভিযোগপত্র থেকে নাম কাটানো, সাক্ষ্য-প্রমাণ গায়েব করে দেওয়া কিংবা ফরিয়াদিকে থানা-আদালতের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে না দেওয়ার ক্ষমতা। এই ক্ষমতা অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক এবং চরিত্রে পুরুষালি। এদের রাজনীতি আছে, শ্রেণীচরিত্র আছে, আছে লিঙ্গপরিচয়। এরাই আজ আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার খুঁটি। রাজনৈতিক সন্ত্রাস আর সামাজিক সন্ত্রাস পরস্পর ভাই ভাই—বোনদের বিপদ তাই বেড়েছে।
এ জন্যই আমি আমার আগের লেখাটিতে বলেছিলাম, ‘আমাদের সমস্যা বাস্তব ও জমাট নৈরাজ্য, ‘‘তরল ভয়’’ নয়।...কারণ সরকার-প্রশাসন শিথিল, আর সমাজ প্রতিরোধহীন। এই সহিংসতা ও অসন্তোষ বিদ্যমান ব্যবস্থারও খেসারত।...এই সন্ত্রাস-দুর্নীতি-নির্যাতন ও বলপ্রয়োগের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশে নিম্নমাত্রার, কিন্তু মোটামুটি স্থায়ী এক নৈরাজ্য চলছে।’ সহিংসতার ‘ভয়’ এই বাস্তবতার ফল, অথচ সুমন রহমান ভয়কেই ভয় ছড়িয়ে পড়ার কারণ ঠাউরেছেন। ফলকে তিনি কারণ ভেবেছেন, তাই কারণ রয়ে গেছে তাঁর চিন্তার আঁকশির নাগালের বাইরে। তাঁর ‘তরল ভয়’ তাই মারেফতি তত্ত্ব হয়েছে সমাজতত্ত্ব নয়।

তিনি বলেছেন, তাঁর পদ্ধতি আরোহী, অর্থাৎ একটা একটা ঘটনা দেখে দেখে তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। অথচ দেখা যাচ্ছে, তিনি গুলশানের ওই জোড়া খুনের ঘটনার বিন্দুতেই আটকে আছেন। একটি ঘটনা থেকেই সব ঘটনার চরিত্র বিচার করার এই পদ্ধতি যুক্তিসংগত নয়। দরকার ঘটনার বিন্দুগুলোকে রেখা দিয়ে যোগ করে পুরো ছবিটি ধরতে পারা এবং সে অনুযায়ী সমাধান খোঁজা। তরল ভয়ের তত্ত্বটি ইউরোপ থেকে আমদানি করে যেভাবে ফিট করেছেন, তাতে তত্ত্বের মুখরক্ষা হয়েছে বটে, কিন্তু সমস্যাটি তাঁর হাত গলে পারদের মতো পড়ে গেছে। আমাদের নাগরিকের সমস্যা পাশ্চাত্যের অতি-আধুনিক জীবনের অস্তিত্ববাদী সংকট নয়; আমাদের অনেক মানুষ না খেতে পাওয়ার ভয়ে ভীত, অনেক কৃষক ফসল মার যাওয়া বা উপযুক্ত দাম না পাওয়ার ভয়ে তটস্থ, অনেক নারীকেই উত্ত্যক্ত অথবা নিপীড়িত হওয়ার আতঙ্ক তাড়া করে, আমাদের তরুণেরা কেউ বখাটে-মাস্তান আর কেউ সেই মাস্তানদের শিকার আর কিশোরী-তরুণীদের ধাওয়া করছে উঠতি মাস্তানের বাসনার আগুন।

বাস্তব সমস্যার কার্যকারণ বাস্তবতার মধ্যেই খুঁজতে হবে। সেই বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি কায়েমি ক্ষমতার মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া দাপট। দেখছি বিকৃত যৌনস্বাধীনতার ফসল পর্নোগ্রাফির বিস্তার এবং ভোগতাড়িত সংস্কৃতির রসায়নে তীব্র হওয়া ভোগবাসনা। এই বাসনার আগুন ক্ষমতার ঘিয়ের সংস্পর্শে এসে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। এই বেপরোয়া ক্ষমতার লাগামহীন বাসনারই প্রকাশ নারীর প্রতি সহিংসতা।

সুমন রহমান এগুলো দেখলেন না, বরং তিনি আবিষ্কার করলেন, ‘কন্যার বিয়েতে মাতাপিতা গররাজি হওয়ায় তাঁরা খুন হলেন, কিন্তু কন্যাটি অপহূত হলো না বা অন্য কোনো রকম সহিংসতার শিকার হলো না।’ এই আবিষ্কারে স্বয়ং তিনিই হতবাক হয়ে বললেন, ‘...বিদ্যমান যে ভয়ের সংস্কৃতি, সেটা আমাদের অনুমিত পথে সব সময় চলছে না।’ সন্ত্রাসের অরণ্যে একটি বৃক্ষ অন্য রকম হলেই কি সন্ত্রাসের সামাজিক ব্যাকরণ বাতিল হয়ে যায়? সন্ত্রাসের বাস্তব চেহারা ও কার্যকারণকে আড়াল করে তিনি কথিত ‘সমাজ-ভাবুকের’ কাজ করেননি, সমাজতাত্ত্বিক জিগম্যান্ট বম্যানের ‘তরল ভয়’ তত্ত্বের বেখাপ্পা ব্যবহার করে দিশেহারা হয়েছেন। তাই চলমান সহিংসতার প্রতিকারের চিন্তা ছেড়ে ঘটনাগুলোর মধ্যকার ‘সূক্ষ্ম পার্থক্যের’ গলিপথে ঢুকলেন তো ঢুকলেন আর বেরোতে পারলেন না। লিখলেন, ‘সমাজ নিজে নিজেই এক ভয়ংকর পথে রওনা দিয়েছে। সে পথের খুঁটিনাটিগুলো খেয়াল করাকে আমি দায়িত্ব মনে করি।’ ভালো কথা, কিন্তু খুঁটিনাটির নুড়িপাথর ঘাঁটতে ঘাঁটতে পাহাড়সমান সমস্যাটাই যে দৃষ্টি থেকে হারিয়ে গেল? একেই বলে চোখের আড়ে পাহাড় লুকানোর কসরত।

সূর্য নয় বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে, এই সত্য বলার জন্য ইতালীয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে ধর্মীয় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল। আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি পুরোহিতদের বারবার বলছিলেন, একবার আমার টেলিস্কোপে চোখ রাখুন, নিজের চোখে দেখুন! কিন্তু পুরোহিতেরা তাঁর কথা শোনার দরকার মনে করেননি। কারণ তাঁদের বিশ্বাস, সত্য দেখা যায় না, তা ধর্মগ্রন্থে লেখা থাকে! আর বাইবেল বলছে, সূর্যই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। সুমন রহমানও তেমনি বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও সামাজিক সহিংসতার বাস্তব ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ না করেই, এক ভাবুকের বই মেলে ধরে আমাদের ‘তরল ভয়’ বোঝাতে বসলেন। অথচ আমাদের দরকার বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করায় আগ্রহী নতুন গবেষক, নতুন তত্ত্ব ও অনুসন্ধান। যাঁরা বাংলাদেশের বাস্তবতাকে নতুন আলোকে বুঝিয়ে দেবেন। সমস্যার চোরাবালিতে ক্রমশ নিমজ্জিত হওয়া বাংলাদেশে এমন গণগবেষক আজ খুব প্রয়োজন। অথচ তিনি বোঝালেন, ‘সে সমাজ-বিপ্লবীর কাজ, সমাজ-ভাবুকের নয়।’

এই কসরত কিন্তু ‘তরল ভয়’ তত্ত্বের প্রবক্তা বম্যান সাহেব প্রশ্রয় দিতেন না। লিকুইড ফিয়ার বইটিতে বম্যান বলেন, প্রয়োগ করা যায় না এমন তত্ত্বের কী দরকার! বম্যানের পরামর্শ হলো, দৃষ্টি পরিষ্কার করে নিন (ক্লিয়ারিং দ্য সাইট)। গুরুবাক্য শিরোধার্য। আমারও মত সেটাই।

ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক।
farukwasif@yahoo.com


ফারুক ওয়াসিফ আসল কথা বলে ফেলেছেন। সুমন রহমান দ্দীণূও লাফাচ্ছে খুঁটির জোরেই। সাজ্জাদ শরীফের হোল ধরে দোল খাচ্ছে ম্যানিপুলেশন-মাস্টার দ্দীণূ। ফরহাদ মগবাজারের শিষ্য দ্দীণূ তার মগবাজারী ইয়ারবকশীদের নিয়ে যে ধোঁয়াটে তত্ত্বীয় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায় পাঠকদের মগজে, তার বিরুদ্ধে ফারুক ওয়াসিফদের মতো কেউ না কেউ রুখে দাঁড়াবেন, এ আশা আমাদের সবার।

দ্দীণূ এই তর্ক চালিয়ে গেলে পোস্ট আপডেট করা হবে, সাথে থাকবে আমাদেরও বিশ্লেষণ। আস্তালাভিস্তা।

No comments:

Post a Comment